বিপর্যস্ত রাজ্যের ১ কোটি মানুষ, শুক্রবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন মুখ্যমন্ত্রী
আছড়ে পড়ার পর কয়েকঘণ্টা কার্যত তাণ্ডব চালিয়েছে ঘূর্ণিঝড় যশ। উত্তাল হয়েছে সমুদ্র। দিঘা ও সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রাণ গিয়েছে ১ জনের, নবান্ন থেকে জানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন তিনি।ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় মঙ্গলবার সারারাত নবান্নেই ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাতভর কন্ট্রোলরুম থেকে নজর রেখেছেন পরিস্থিতির উপর। বুধবার সকালেও একাধিকবার সাংবাদিক বৈঠক করে পরিস্থিতির কথা জানিয়েছেন রাজ্যবাসীকে। যশের ল্যান্ডফল শেষ হতেই নবান্ন থেকে সাংবাদিক বৈঠক করলেন তিনি। জানিয়েছেন, ১৫লক্ষ ৪ হাজার ৫০৬ জনকে সরানো হয়েছিল। তা সত্ত্বেও প্রায় এক কোটি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ৩ লক্ষ বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। ১৩৪টি বাঁধ ভেঙেছে। নোনা জলের কারণে কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মাছেরও ক্ষতি হয়েছে। ত্রাণ শিবিরগুলিতে ১০ লক্ষ ত্রিপল পাঠানো হয়েছে ইতিমধ্যেই। ১০ কোটি চাল ও শুকনো খাবার পাঠানো হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ত্রাণ শিবিরে ওঠার পরও ১ ব্যক্তি মাছের জন্য জাল ফেলতে গিয়েছিলেন। জলে ডুবে গিয়েছেন তিনি। সন্দেশখালি, নামখানা, পাথরপ্রতিমা, বাসন্তী, ক্যানিং ১ ও ২ নম্বর ব্লক, বজবজ, দিঘা, শংকরপুর, তাজপুর, রামনগর, কাঁথি, নন্দীগ্রাম, সুতাহাটা, দেশপ্রাণ, কোলাঘাট, শ্যামপুর, এদিকে কালীঘাট, চেতলা, রাসবিহারী-সহ গঙ্গার সামনের বহু এলাকা জলে প্লাবিত হয়েছে। আরও পড়ুন: ঘণ্টায় ১৫৫ কিমি বেগে বালাসোরের দক্ষিণে আছড়ে পড়ল যশমুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামিকালও দুর্যোগ থাকবে। তাই প্রত্যেককে ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। যারা নদী বা সমুদ্রের পাশে থাকেন, তাঁদের সতর্ক থাকতে বলেছেন। ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে বিঁধেছেন কেন্দ্রকেও। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আগামী শুক্রবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন তিনি। পাশাপাশি বিপর্যস্তদের সবরকম সহযোগিতার নির্দেশও দিয়েছেন। ঘূর্ণিঝড়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে শহর কলকাতা। তবে ভরা কোটালের জেরে জলমগ্ন শহরের একাধিক এলাকা। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বৃষ্টি। সেই জল নামতে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় লাগবে বলে জানিয়েছে কলকাতা পুরসভা। দ্রুত জল নামাতে ম্যানহোল খুলে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন এলাকার। তবে বিপদ এড়াতে শহরের একাধিক এলাকার বিদ্যুৎ পরিষেবা বিচ্ছিন্ন করেছে সিইএসসি। জল না নামা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে না বলে খবর।পূর্ণিমা, চন্দ্রগ্রহণ এবং ভরাকোটালের জেরে জলস্তর বেড়েছে গঙ্গা ও আদিগঙ্গার জলস্তর। আর তার জেরেই জলমগ্ন দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট, রাসবিহারী, ভবানীপুর ও চেতলার বিস্তীর্ণ এলাকা। বসতি এলাকায় ঘরে ঢুকেছে নোংরা জল। এদিকে রাতে জোয়ার এলে জলস্তর আরও বাড়বে। সেই সময় পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে। আর এই জমা জল থেকে ঘটতে পারে বিপদ। দুর্ঘটনা এড়াতে সাঁকরাইল, বাউড়িয়া, বজবজ ও কালীঘাটের একাংশে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, তড়িদাহত হওয়ার ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনে জলমগ্ন এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ এড়াতে পরিষেবা বন্ধ রাখার আবেদন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।এদিন রাজ্যের বহু জায়গায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়েছে। প্রচুর বৈদ্যুতিক পোস্টের ক্ষতি হয়েছে। তবে সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি। এ প্রসঙ্গে বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস জানান, অনেক এলাকায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গিয়েছে। বিকেলের পর ক্ষয়ক্ষতির আঁচ পাওয়া যাবে। এদিকে বিদ্যুৎহীন হয়ে রয়েছে কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকা। কবে স্বাভাবিক হবে এই পরিস্থিতি? এই প্রশ্নের জবাবে সিইএসসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, যে সমস্ত এলাকায় জমা জলের স্তর বেড়ে গিয়েছে সেখানে বিদ্যুৎ পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সাঁকরাইল, বাউড়িয়া, বজবজ ও কালীঘাটের একাংশ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর সংযোগ ফিরিয়ে দেওয়া হবে।